
স্টাফ রিপোর্টার:
সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত এক খবরে দাবি করা হয় যে, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক বলেছেন—চাকরি টিকিয়ে রাখতে কোনো সংগঠনের ‘রুকন’ হওয়া বাধ্যতামূলক। এই খবরে সামাজিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনে সমালোচনা শুরু হলেও শনিবার (১৬ আগস্ট) এক প্রতিবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে ইসলামিক ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, এ খবর সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর।
—
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রতিবাদ বিজ্ঞপ্তি
প্রতিবাদ বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্টভাবে জানানো হয়, মহাপরিচালক কখনোই এ ধরনের বক্তব্য দেননি। সংবাদটি প্রচারের মাধ্যমে সাধারণ মানুষ ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হয়েছে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীকে সম্ভবত ভুল তথ্য সরবরাহ করা হয়েছে। তিনি সেই তথ্যের ভিত্তিতেই সংবাদ প্রকাশ করেছেন।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়—
মহাপরিচালক আব্দুস ছালাম খান একজন সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ এবং বরেণ্য আলেম।
তার বিরুদ্ধে বিভ্রান্তিকর সংবাদ প্রচার করা নিন্দনীয় ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান, যা সরকারি বিধি-বিধান অনুযায়ী পরিচালিত হয়।
—
ইসলামিক ফাউন্ডেশন: ইতিহাস ও ভূমিকা
বাংলাদেশে ইসলাম প্রচার, গবেষণা ও শিক্ষা কার্যক্রমকে সমন্বিত করার লক্ষ্যে ১৯৭৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ।
প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য ছিল—
ইসলামিক গবেষণা, শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিকাশ,
কোরআন-হাদিসের সঠিক ব্যাখ্যা ও জ্ঞান প্রচার,
মসজিদ ও মাদ্রাসা উন্নয়ন,
দাওয়াহ কার্যক্রম ও ইসলামিক সাহিত্য প্রকাশ,
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইসলামিক সংস্কৃতির প্রসার।
বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি দেশের সবচেয়ে বড় সরকারি ইসলামিক সংস্থা হিসেবে কাজ করছে।
—
প্রতিষ্ঠানটির কাঠামো
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম পরিচালিত হয় কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শাখার মাধ্যমে। এর মধ্যে রয়েছে—
প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনা বিভাগ
গবেষণা, গ্রন্থাগার ও প্রকাশনা বিভাগ
ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমি
দাওয়াহ ও সংস্কৃতি বিভাগ
সামাজিক উন্নয়ন ও কল্যাণমূলক প্রকল্প বিভাগ
এই শাখাগুলো সমন্বিতভাবে ধর্মীয় শিক্ষা ও গবেষণাকে এগিয়ে নিচ্ছে।
—
নিয়োগ ও চাকরির নিয়মনীতি
ফাউন্ডেশনের বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে—
1. নিয়োগ ও পদোন্নতি সরকারি বিধি-বিধান অনুযায়ী হয়।
2. চাকরির সাথে কোনো সংগঠনের সদস্যপদ বা ব্যক্তিগত মতামতের সম্পর্ক নেই।
3. নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতির সিদ্ধান্ত নেন বোর্ড অফ গভর্নরস।
অতএব, মহাপরিচালকের একক সিদ্ধান্তে কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর চাকরি বা পদোন্নতি নির্ধারিত হয় না।
—
বোর্ড অফ গভর্নরস: সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী সংস্থা
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বোর্ড অফ গভর্নরস-এর চেয়ারম্যান পদাধিকারবলে ধর্ম উপদেষ্টা। এছাড়াও বোর্ডে রয়েছেন—
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব
মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের নেতা শাহ নেছারুল হক
বেফাকের মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক
তামিরুল মিল্লাতের অধ্যক্ষ মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী
অন্যান্য বরেণ্য আলেম ও প্রশাসনিক কর্মকর্তারা
এই বোর্ডের অনুমোদন ছাড়া ইসলামিক ফাউন্ডেশনে নিয়োগ বা প্রশাসনিক কোনো সিদ্ধান্ত কার্যকর হয় না।
—
কেন বিভ্রান্তি ছড়ানো হলো?
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার জন্য এ ধরনের বিভ্রান্তিকর সংবাদ প্রচার করা হয়ে থাকতে পারে।
সম্ভাব্য কারণ—
জনগণের মাঝে সরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতি অবিশ্বাস তৈরি করা।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালককে বিতর্কিত করা।
রাজনৈতিকভাবে নির্দিষ্ট একটি ইস্যু তৈরি করা।
এ কারণে দ্রুতই প্রতিবাদ জানায় ফাউন্ডেশন।
—
সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই এই বিষয়ে মতামত দিয়েছেন। কেউ বলেছেন—
যদি সত্যি এ ধরনের কথা বলা হতো, তবে তা অন্যায় হতো।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রতিবাদে বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে।
সরকারি প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি রক্ষায় ভবিষ্যতে আরও কঠোর অবস্থান নেওয়া উচিত।
—
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রতি আস্থা
সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ইসলামিক ফাউন্ডেশন দেশের ধর্মীয় ও সামাজিক উন্নয়নে কাজ করে আসছে। প্রতিষ্ঠানটি—
ইমাম ও খতিবদের প্রশিক্ষণ,
কোরআন মুদ্রণ ও বিতরণ,
ইসলামিক গ্রন্থ প্রকাশ,
গবেষণা কার্যক্রম,
সামাজিক উন্নয়নমূলক প্রকল্প—
এসব কার্যক্রমের মাধ্যমে জনগণের আস্থা অর্জন করেছে।
তাই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ভ্রান্ত সংবাদ জনগণকে বিভ্রান্ত করার শামিল।
—
‘রুকন না হলে চাকরি থাকবে না’—এই ধরনের সংবাদকে ইসলামিক ফাউন্ডেশন সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর বলে নাকচ করেছে।
প্রতিষ্ঠানটির দাবি, তাদের নিয়োগ ও পদোন্নতির সব কার্যক্রম সরকারি নিয়ম অনুযায়ী পরিচালিত হয়। মহাপরিচালক আব্দুস ছালাম খানের বিরুদ্ধে বিভ্রান্তিকর প্রচার উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও নিন্দনীয়।
গণমাধ্যম ও রাজনৈতিক নেতাদের দায়িত্বশীলভাবে তথ্য যাচাই করে প্রচার করার আহ্বান জানিয়েছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন।