
প্রতিবেশীর হক: কুরআন ও হাদিসের আলোকে বিস্তারিত আলোচনা
ইসলামে প্রতিবেশীর অধিকার বা “হকুল জিরান” অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটি ঈমানের অঙ্গ ও সামাজিক শান্তির ভিত্তি। কুরআন ও হাদিসে প্রতিবেশীর সাথে উত্তম আচরণ, তাদের অধিকার আদায় এবং ক্ষতি থেকে বিরত থাকার উপর ব্যাপকভাবে জোর দেওয়া হয়েছে। আসুন বিস্তারিতভাবে জেনে নেই:
### ১. কুরআনের নির্দেশনা:
**সূরা আন-নিসা, আয়াত ৩৬:**
* **আরবি:**
> وَاعْبُدُوا اللَّهَ وَلَا تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا ۖ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا وَبِذِي الْقُرْبَىٰ وَالْيَتَامَىٰ وَالْمَسَاكِينِ وَالْجَارِ ذِي الْقُرْبَىٰ وَالْجَارِ الْجُنُبِ وَالصَّاحِبِ بِالْجَنْبِ وَابْنِ السَّبِيلِ وَمَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ ۗ إِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ مَنْ كَانَ مُخْتَالًا فَخُورًا
* **বাংলা অর্থ:**
> “তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এবং তাঁর সাথে কোন কিছুকে অংশীদার করো না। আর পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার কর, নিকটাত্মীয়, এতিম, মিসকীন, নিকট প্রতিবেশী, দূর প্রতিবেশী, পার্শ্বসঙ্গী, পথিক এবং তোমাদের মালিকানাভুক্ত দাস-দাসীদের সাথেও। নিশ্চয় আল্লাহ অহংকারী, দম্ভকারীকে পছন্দ করেন না।”
**ব্যাখ্যা:**
* এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা সরাসরি **দুই ধরনের প্রতিবেশীর** কথা উল্লেখ করেছেন:
1. **الْجَارِ ذِي الْقُرْبَىٰ (আল-জা-রি যিল কুরবা):** আত্মীয় বা নিকটবর্তী প্রতিবেশী।
2. **الْجَارِ الْجُنُبِ (আল-জা-রিল জুনুবি):** অনাত্মীয় বা দূরবর্তী প্রতিবেশী (যেমন: অন্য ধর্মাবলম্বী, অন্য এলাকা থেকে আসা)।
* এখানে প্রতিবেশীর হককে আল্লাহর ইবাদত, পিতা-মাতার হক ও নিকটাত্মীয়ের হকের পরেই স্থান দেওয়া হয়েছে, যা এর গুরুত্ব প্রমাণ করে।
* **সদ্ব্যবহার (ইহসান)** এর আদেশ দেওয়া হয়েছে, যা শুধু ক্ষতি না করা নয়, বরং সক্রিয়ভাবে তাদের কল্যাণ কামনা ও সাহায্য-সহযোগিতা করা অন্তর্ভুক্ত করে।
### ২. হাদিসের বিস্তারিত বর্ণনা ও নির্দেশনা:
**ক) প্রতিবেশীর হক আদায় না করলে পূর্ণ ঈমানদার হওয়া যায় না:**
* **সহীহ মুসলিম (৪৭):**
* **আরবি:**
> عَنْ أَبِي شُرَيْحٍ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: وَاللَّهِ لَا يُؤْمِنُ، وَاللَّهِ لَا يُؤْمِنُ، وَاللَّهِ لَا يُؤْمِنُ. قِيلَ: وَمَنْ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ: الَّذِي لَا يَأْمَنُ جَارُهُ بَوَائِقَهُ.
* **বাংলা অর্থ:**
> আবু শুরায়হ (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন: “আল্লাহর শপথ! সে মু’মিন নয়, আল্লাহর শপথ! সে মু’মিন নয়, আল্লাহর শপথ! সে মু’মিন নয়।” জিজ্ঞাসা করা হল, ‘কে হে আল্লাহর রাসূল?’ তিনি বললেন: “যার অনিষ্ট থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপদ নয়।”
* **ব্যাখ্যা:** এই হাদিসে ঈমানের সাথে প্রতিবেশীর নিরাপত্তার সরাসরি সম্পর্ক স্থাপন করা হয়েছে। প্রকৃত ঈমানদার হওয়ার শর্ত হল প্রতিবেশীকে তার কথায়, কাজে, আচরণে ও সম্পদে কোনরকম ক্ষতি বা কষ্ট না দেওয়া।
**খ) প্রতিবেশীর সাথে উত্তম আচরণ ঈমানের লক্ষণ:**
* **সহীহ বুখারী (৬০১৮), সহীহ মুসলিম (৪৬):**
* **আরবি:**
> عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: خَيْرُ الْأَصْحَابِ عِنْدَ اللَّهِ خَيْرُهُمْ لِصَاحِبِهِ، وَخَيْرُ الْجِيرَانِ عِنْدَ اللَّهِ خَيْرُهُمْ لِجَارِهِ.
* **বাংলা অর্থ:**
> আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: “আল্লাহর নিকট সর্বোত্তম সঙ্গী সে, যে তার সঙ্গীর জন্য সর্বোত্তম। আর আল্লাহর নিকট সর্বোত্তম প্রতিবেশী সে, যে তার প্রতিবেশীর জন্য সর্বোত্তম।”
**গ) প্রতিবেশীর হক কতটুকু? জিবরীল (আ.)-এর বারংবার তাগিদ:**
* **সহীহ বুখারী (৬০১৫), সহীহ মুসলিম (৪৫):**
* **আরবি:**
> عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: يَا نِسَاءَ الْمُسْلِمَاتِ، لَا تَحْقِرَنَّ جَارَةٌ لِجَارَتِهَا وَلَوْ فِرْسِنَ شَاةٍ. وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: مَا زَالَ جِبْرِيلُ يُوصِينِي بِالْجَارِ حَتَّى ظَنَنْتُ أَنَّهُ سَيُوَرِّثُهُ.
* **বাংলা অর্থ:**
> আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: “হে মুসলিম নারীগণ! কোন প্রতিবেশীনী যেন তার প্রতিবেশীনীকে (উপহার দিতে) তুচ্ছ না জ্ঞান করে, তা যদি ছাগলের পায়ের খুরও হয়।” এবং আবু হুরায়রা (রা.) থেকেই বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: “জিবরীল (আ.) আমাকে প্রতিবেশীর হক সম্পর্কে এত বেশি তাগিদ দিতে থাকলেন যে, আমার ধারণা হল, তিনি তাকে (প্রতিবেশীকে) ওয়ারিস বানিয়ে দেবেন।”
* **ব্যাখ্যা:** এই হাদিস দুটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
* প্রথম অংশে **অতি সামান্য জিনিস দিয়েও** প্রতিবেশীর সাথে ভালোবাসা বিনিময়ের শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। তাকে উপহার দেওয়া বা সাহায্য করা যেন তুচ্ছ মনে না হয়।
* দ্বিতীয় অংশে জিবরীল (আ.)-এর **অবিরাম তাগিদ** এটাই প্রমাণ করে যে ইসলামে প্রতিবেশীর হকের গুরুত্ব কত অপরিসীম। নবীজি (সা.) ভেবেছিলেন প্রতিবেশীকেও ওয়ারিসের মর্যাদা দেওয়া হবে!
**ঘ) প্রতিবেশী ক্ষুধার্ত থাকা অবস্থায় পেটপুরে খাওয়ার নিন্দা:**
* **সহীহ বুখারী (৬০১৬), আল-আদাবুল মুফরাদ (১১২):**
* **আরবি:**
> عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ: سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: لَيْسَ الْمُؤْمِنُ الَّذِي يَشْبَعُ وَجَارُهُ جَائِعٌ إِلَى جَنْبِهِ.
* **বাংলা অর্থ:**
> ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি নবী (সা.)-কে বলতে শুনেছি: “সে ব্যক্তি মু’মিন নয়, যে পেট পুরে খায় অথচ তার পাশের প্রতিবেশী ক্ষুধার্ত থাকে।”
* **ব্যাখ্যা:** এই হাদিসে প্রতিবেশীর মৌলিক চাহিদা (খাদ্য) পূরণের দায়িত্বের উপর জোর দেওয়া হয়েছে। নিজে সচ্ছল হলে প্রতিবেশীকে সহযোগিতা করা ঈমানের দাবি।
**ঙ) প্রতিবেশীর তিনটি শ্রেণি ও তাদের হক:**
* **সুনান আত-তিরমিযী (১৯৪৫), আল-আদাবুল মুফরাদ (১১৪):**
* **আরবি:**
> عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: الْجَارُ ثَلَاثَةٌ: جَارٌ لَهُ حَقٌّ وَاحِدٌ، وَجَارٌ لَهُ حَقَّانِ، وَجَارٌ لَهُ ثَلَاثَةُ حُقُوقٍ. فَأَمَّا الَّذِي لَهُ حَقٌّ وَاحِدٌ فَجَارٌ مُشْرِكٌ لَا رَحِمَ لَهُ، فَحَقُّهُ أَدْنَى الْحُقُوقِ. وَأَمَّا الَّذِي لَهُ حَقَّانِ فَجَارٌ مُسْلِمٌ لَا رَحِمَ لَهُ، فَحَقُّهُ حَقُّ الْجِوَارِ. وَأَمَّا الَّذِي لَهُ ثَلَاثَةُ حُقُوقٍ فَجَارٌ مُسْلِمٌ ذُو رَحِمٍ، فَحَقُّهُ حَقُّ الْجِوَارِ وَحَقُّ الْإِسْلَامِ وَحَقُّ الرَّحِمِ.
* **বাংলা অর্থ:**
> আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: “প্রতিবেশী তিন প্রকার:
1. **একটি হকের অধিকারী প্রতিবেশী:** সে হল মুশরিক প্রতিবেশী যার সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক নেই। তার হক হল সর্বনিম্ন হক (শুধু ক্ষতি না করা)।
2. **দুটি হকের অধিকারী প্রতিবেশী:** সে হল মুসলিম প্রতিবেশী যার সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক নেই। তার হক হল প্রতিবেশীত্বের হক।
3. **তিনটি হকের অধিকারী প্রতিবেশী:** সে হল মুসলিম প্রতিবেশী যার সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক রয়েছে। তার হক হল প্রতিবেশীত্বের হক, ইসলামের হক এবং আত্মীয়তার হক।”
* **ব্যাখ্যা:** এই হাদিস প্রতিবেশীর ধর্ম ও আত্মীয়তার ভিত্তিতে তার হকের স্তর নির্ধারণ করে দেয়। সবচেয়ে বেশি হক মুসলিম আত্মীয় প্রতিবেশীর, তারপর মুসলিম অনাত্মীয় প্রতিবেশীর এবং সর্বনিম্ন হক অমুসলিম প্রতিবেশীর (তবুও তারও হক রয়েছে – মূলত ক্ষতি না করা)। এই হাদিস ইসলামের সর্বজনীনতা ও ন্যায়বিচারের পরিচয় দেয়।
**চ) প্রতিবেশীর সম্পদের ক্ষতি থেকে সাবধানতা:**
* **সহীহ বুখারী (২৩৩৩), সহীহ মুসলিম (১৬০):**
* **আরবি:**
> عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: لَا يَمْنَعْ أَحَدُكُمْ جَارَهُ أَنْ يَغْرِزَ خَشَبَةً فِي جِدَارِهِ. ثُمَّ قَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ: مَا لِي أَرَاكُمْ عَنْهَا مُعْرِضِينَ؟ وَاللَّهِ لَأَرْمِيَنَّ بِهَا بَيْنَ أَكْتَافِكُمْ.
* **বাংলা অর্থ:**
> আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন: “তোমাদের কেউ যেন তার প্রতিবেশীকে তার (নিজের) দেয়ালে কাঠ (খুঁটি) গাড়তে বাধা না দেয়।” অতঃপর আবু হুরায়রা (রা.) বলতেন: “তোমাদেরকে আমি এ হাদিস থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকতে দেখছি কেন? আল্লাহর শপথ! আমি এ হাদিসটি তোমাদের কাঁধের মাঝে নিক্ষেপ করব (অর্থাৎ, বারবার বলব)।”
* **ব্যাখ্যা:** এ হাদিসে প্রতিবেশীর সুবিধার জন্য নিজের সম্পদের সামান্য ব্যবহারে বাধা না দেওয়ার শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। সামাজিক সম্প্রীতি ও সহযোগিতা এখানে মুখ্য।
### প্রতিবেশীর হক কী কী? (সংক্ষিপ্ত তালিকা)
কুরআন ও হাদিসের আলোকে প্রতিবেশীর প্রধান হকগুলো হল:
1. **ক্ষতি না করা:** শারীরিক, মানসিক, আর্থিক, সামাজিক বা সম্পদের কোন ক্ষতি না করা। (শব্দদূষণ, আবর্জনা ফেলা, দৃষ্টি আটকানো, গীবত ইত্যাদিও ক্ষতির অন্তর্ভুক্ত)।
2. **শারীরিক ও মানসিক নিরাপত্তা প্রদান:** বিপদে সাহায্য করা, নিরাপত্তাহীনতায় ভোগা থেকে রক্ষা করা।
3. **সদাচরণ ও উত্তম আচরণ:** ভালো ব্যবহার, হাসিমুখে সালাম দেওয়া, খোঁজখবর নেওয়া।
4. **সহানুভূতি ও সমবেদনা:** দুঃখ-কষ্টে পাশে থাকা, শোক প্রকাশ করা, রোগে শুশ্রূষা করা।
5. **সহযোগিতা করা:** প্রয়োজনে আর্থিক, শারীরিক বা অন্য কোন সাহায্য করা (বিশেষ করে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসার ক্ষেত্রে)।
6. **তাকে অভাবগ্রস্ত না রাখা:** নিজে সচ্ছল হলে প্রতিবেশীকে অভাবগ্রস্ত অবস্থায় রেখে না খাওয়া।
7. **সহমর্মিতা ও ধৈর্য ধারণ:** তার কষ্টদায়ক আচরণে ধৈর্য ধরা (যদি থাকে)।
8. **তাকে উপহার দেওয়া:** সামান্য হলেও নিয়মিত বা অনিয়মিতভাবে উপহার দেওয়া, যা ভালোবাসা বাড়ায়।
9. **তার গোপনীয়তা রক্ষা করা:** তার ব্যক্তিগত বা পারিবারিক বিষয় গোপন রাখা।
10. **তার সন্তানদের হেফাজত করা:** প্রয়োজনে তাদের দেখাশোনা করা, বিপদ থেকে রক্ষা করা।
11. **তার অনুমতি ছাড়া তার ঘরে দৃষ্টিপাত না করা।**
12. **বাড়ি বা দোকান এমনভাবে নির্মাণ না করা যাতে তার আলো-বাতাস বাধাগ্রস্ত হয় বা তার প্রাইভেসি নষ্ট হয়।**
### গুরুত্বপূর্ণ উপলব্ধি:
* **প্রতিবেশীর সংজ্ঞা:** ইসলামী আইনবিদগণ সাধারণত যে ব্যক্তি বা পরিবার আপনার বাড়ির আশেপাশে (সাধারণত ৪০ ঘর পর্যন্ত) বসবাস করেন, তাকেই প্রতিবেশী হিসেবে গণ্য করেন। ফ্ল্যাটবাড়ির ক্ষেত্রে উপরে-নিচে-পাশের বাসিন্দারা প্রতিবেশী।
* **আধুনিক প্রেক্ষাপট:** আজকের শহুরে জীবনে প্রতিবেশীর ধারণা কিছুটা পরিবর্তিত হলেও মূলনীতি একই থাকে। ফ্ল্যাটের পাশের, উপরে-নিচের বাসিন্দা, দোকানের পাশের দোকানদার, অফিসের পাশের কক্ষের সহকর্মী – সবাই তাদের অবস্থান অনুযায়ী প্রতিবেশীর হক পাওয়ার অধিকারী।
* **শুধু নেতিবাচকতা বর্জন নয়, সক্রিয় কল্যাণ:** প্রতিবেশীর হক শুধু তার ক্ষতি না করলেই আদায় হয় না; বরং তার কল্যাণে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করাও এর অপরিহার্য অংশ।
### উপসংহার:
প্রতিবেশীর হক ইসলামের সামাজিক দিকের একটি মৌলিক ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। এটি শুধু আইনগত দায়িত্ব নয়, বরং ঈমানের দাবি ও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যম। কুরআনের সরাসরি নির্দেশ এবং রাসূল (সা.)-এর বারংবার তাগিদ ও ব্যাখ্যা প্রতিবেশীর হকের গুরুত্বকে ঊর্ধ্বে স্থান দিয়েছে। যে সমাজে প্রতিবেশীরা একে অপরের হক আদায় করে, সেখানে শান্তি, নিরাপত্তা, ভালোবাসা ও সহমর্মিতা বিরাজ করে। প্রত্যেক মুসলিমের উচিত উপরোক্ত আয়াত ও হাদিসগুলোর আলোকে নিজ নিজ প্রতিবেশীর হক যথাযথভাবে আদায় করা এবং একটি সুন্দর, কল্যাণময় ও ইসলামী সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখা।